মহররম — ইসলামি হিজরি বছরের প্রথম মাস। এটি চারটি সম্মানিত মাসের একটি, যাকে কুরআনে “আশহুরে হুরুম” বলা হয়েছে (সুরা তওবা: ৩৬)। এই মাসে রোজা ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমাদের সমাজে এ মাস ঘিরে বহু ভ্রান্ত বিশ্বাস, বিদআত ও নাটকীয়তা বিস্তার লাভ করেছে।
আশুরা: শোক ও মাতম নয়, সুন্নাত ও রোজার দিন
ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদতের স্মরণে অনেকেই বুক চাপড়ানো, মাতম করা, তাজিয়া মিছিল বের করা, এমনকি শরীর জখম করে রক্ত ঝরান — এসব ইসলামি বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং হারাম কাজ।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন — কেউ যদি ইসলামি শরিয়তের বাইরে এমন কিছু করে যার ভিত্তি দ্বীনে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে (সহিহ মুসলিম: ১৭১৮)।
মহররমে প্রচলিত কিছু বিদআতি ও নিষিদ্ধ কাজ:
আশুরার দিনে মাতম, বুক চাপড়ানো ও তাজিয়া মিছিল।
হালুয়া-খিচুড়ি রান্না করে সওয়াবের নিয়তে বিতরণ।
আশুরার রাতে নির্দিষ্ট নামাজ, মোমবাতি জ্বালানো বা বিশেষ ইবাদতের আয়োজন।
আশুরাকে ঈদের মতো উদযাপন করা — নতুন জামা, বিয়ে, খেলনা ইত্যাদি।
কবর জিয়ারতে কান্নাকাটি ও ‘ইয়া হুসাইন’ ধ্বনি।
ইমাম মালিক (রহ.) বলেন: “মুহাররমের ১০ তারিখে কোনো বিশেষ রান্নাবান্না, সাজসজ্জা বা উৎসব পালনের প্রমাণ আমি পাইনি। এসব বিদআত।” (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সুন্নাত কী?
আশুরার রোজা রাখা: ৯-১০ বা ১০-১১ মহররম।
বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত ও তাওবা করা।
বিদআত থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা।
রাসূল (সা.) বলেন: “আমি আশা করি, আশুরার রোজা এক বছর আগের গুনাহ মোচন করে দেবে।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
মনে রাখুন:
মহররম শোকের মাস নয়, বরং এটি ইবাদতের মাস। শোক পালনের নামে বিদআতি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া ইসলামের মূল চেতনার বিরোধী। আমাদের উচিত রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের দেখানো পথে চলা — উদ্ভট সংস্কার ও জাহেলি ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থাকা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!