আরবি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের ১০ তারিখ, যাকে ‘আশুরা’ বলা হয়, তা ইসলামের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। হযরত ইমাম হুসাইন (রা.)-এর কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হওয়ায় অনেক মুসলিম এ দিনকে শোকের উপলক্ষ হিসেবে পালন করেন। কিন্তু ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এ দিনের কিছু কর্মকাণ্ড বর্জনীয় হিসেবে বিবেচিত।
আসুন জেনে নিই, আশুরার দিনে যেসব কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত—
আশুরার তাৎপর্য ও পটভূমি:
প্রাক-ইসলামি যুগ থেকেই আরবরা এই দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন। নবীজী (সা.) নিজেও আশুরার রোজা পালন করতেন এবং সাহাবীদেরও উৎসাহ দিতেন। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফল হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু ৬১ হিজরির ১০ মহররমে কারবালার করুণ ঘটনা মুসলিম সমাজে গভীর বেদনার সৃষ্টি করে।
আশুরার দিনে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন:
১. তাজিয়া বা কৃত্রিম কবর বানানো ও প্রদর্শন।
২. তাজিয়া বহন করে মিছিল করা বা রাস্তা প্রদক্ষিণ।
৩. তাজিয়ার সামনে হাতজোড় করে সম্মান প্রদর্শন ও অর্থ দান।
৪. নিজ শরীরে আঘাত করে রক্তাক্ত হওয়া।
৫. ‘হায় হোসেন, হায় আলি’ বলে বিলাপ বা মাতম করা।
৬. ঘোড়া সাজিয়ে যুদ্ধের মহড়া বা প্রদর্শনী।
৭. বাদ্যযন্ত্রসহ নকল কবর নিয়ে মিছিল বা প্রদর্শনী।
৮. ছোট বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষা করানো (দীর্ঘায়ুর উদ্দেশ্যে)।
৯. শোকের প্রতীক হিসেবে নির্দিষ্ট রঙের পোশাক (কালো/সবুজ) পরা।
১০. দুর্বল বা ভিত্তিহীন হাদিস প্রচার করা। যেমন: ১০ দিন রোজা রাখলে ১০ হাজার বছরের ইবাদতের সওয়াব ইত্যাদি।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:
শোক প্রকাশের নামে মাতম, রক্তপাত, তাজিয়া মিছিল — এসব কর্মকাণ্ড ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কষ্ট ও শোক প্রকাশের জন্য কখনো আত্মনিগ্রহ বা জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণমূলক আয়োজন করেননি। বরং আশুরা উদযাপন করা উচিত ইবাদত, রোজা, তাওবা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে।
উপসংহার:
আশুরা একটি পবিত্র দিন। ইসলামের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কোনো কুসংস্কার বা বিদআতি কাজ করে এই দিনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না করাই শ্রেয়। বরং এই দিন আত্মশুদ্ধি, নফল রোজা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উপলক্ষ হওয়া উচিত।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!