দশকের পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনে ২০১৯ সালের বিতর্কিত ঘটনার ছাপ মুছাতে না পারায় এবারও বহু প্রার্থী উদ্বিগ্ন। প্রার্থীদের অভিযোগ—উপাচার্য অধ্যায়ের পর আবাসিক হলগুলোর প্রভোস্ট নিয়োগে গতকালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কাজ করেছে; ফলে বিশেষ কিছু প্রভোস্ট যদি হল সংসদ নির্বাচন বাস্তবায়ন কমিটিতে দায়িত্বে থাকেন, তাহলে নির্বাচনী অনিয়ম বা “ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং”-র আশঙ্কা থেকে যায়। এসব অভিযোগ ইতিমধ্যেই ডাকসু নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছে।
প্রার্থীরা বলছেন, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যেসব প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাতে অনেকে সরাসরি রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত — ফলে তারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন না। ফলে তাদের নিজ নিজ হলের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে রাখা হলে পক্ষপাতিত্ব এবং অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়বে। অনেক প্রার্থীই দাবি করেছেন: প্রভোস্টদের ভোটকেন্দ্র বা কমিটি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিরপেক্ষ সিনিয়র শিক্ষকদের রাখা উচিত।
হল সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিগুলোতে সাধারণত হলের সভাপতি (অর্থাৎ প্রভোস্ট) ও অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে — কিন্তু প্রার্থীরা এটিকে ‘স্বার্থের সংঘাত (Conflict of Interest)’ হিসেবেই দেখছেন। স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী আশিকুর রহমান জীম ভেনু নির্বাচন কমিটির গঠন পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, “প্রভোস্টরা তাদের পছন্দমতো লোক অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করছেন; এতে নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না। আমরা দিচ্ছি—নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করা হোক।”
এক আবাসিক শিক্ষক এবং একটি হল সংসদ জিএস প্রার্থীও অভিযোগ করেছেন, তাদের হলের প্রভোস্ট রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত এবং ইতিমধ্যেই প্রভাব খাটানোর সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। ডাকসু ফর চেঞ্জ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, “২০১৯ সালের নির্বাচনেও প্রভোস্টদের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত; এবারও আমরা একই রকম ইঙ্গিত পাচ্ছি—সুতরাং প্রভোস্টদের ভোটকেন্দ্র দায়িত্ব থেকে সরানোই সঠিক।”
অন্যদিকে জিএস প্রার্থী রাশেদ খান ২০১৯ সালের নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ওই বছরে ঘটেছে ভয়াবহ পর্যায়ের কারচুপি — তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তৎপরতার অভাবে কোনো প্রতিকার হয়নি। তিনি বলেন, “তৎকালীন তদন্ত কমিটিই ভোট কারচুপিতে জড়িত শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল—তাই আমরা আশা করেছিলাম, নতুন তদন্ত প্রকৃত ফল দেখাবে; কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি।”
ডাকসু নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, হল সংসদ নির্বাচন বাস্তবায়ন কমিটি কেবল হলের নির্বাচনী কার্যক্রম দেখভাল করবে; কেন্দ্রে প্রভোস্টদের কোনো প্রভাব থাকবে না এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে “এবার কারচু্পির সুযোগ নেই”।
তবে ২০১৯ সালের মামলার অনুসন্ধান চালানোর জন্য ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গঠিত তদন্ত কমিটিও এখনও রিপোর্ট দাখিল করতে পারেনি। কমিটির সদস্যবিশেষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন—তদন্ত চলছে এবং প্রতিবেদন শিগগির দাখিল করা হবে। এদিকে ধীরগতির তদন্তপ্রক্রিয়া প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পেতে ব্যর্থ প্রার্থীদের হতাশ করছে।
প্রার্থীদের দাবি ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির মধ্যেই এখন দেখার বিষয়—আগামী নির্বাচনের পরিবেশ কতটা স্বচ্ছ ও সমতাভিত্তিক রাখা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্টতা, প্রভোস্টদের ভূমিকাসহ তৎপর প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো ডাকসু ভোটকে কেমন প্রভাবিত করে—সেই প্রশ্নই এখন সামনে থেকে যায়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!