কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতের স্মরণে মুসলমানরা প্রতিবছর মহররমের ১০ তারিখে পালন করেন ‘আশুরা’। এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক শোকাবহ উপলক্ষ। তবে জানেন কি, শুধু মুসলমানরাই নন—ভারতের একটি হিন্দু সম্প্রদায়ও শত শত বছর ধরে পালন করে আসছে এই আশুরা?
এই ব্যতিক্রমী সম্প্রদায়ের নাম ‘হুসাইনি ব্রাহ্মণ’। ভারতের পাঞ্জাব, কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দিল্লি, লখনৌ এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। গবেষণা বলছে, আরব দেশগুলোতেও ছড়িয়ে রয়েছেন এই হিন্দু গোষ্ঠীর কিছু মানুষ।
হিন্দু হয়েও আশুরায় শোক পালন করেন কেন?
‘হুসাইনি ব্রাহ্মণ’রা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হলেও ইমাম হুসাইনের প্রতি তাদের অগাধ শ্রদ্ধা। লোককথা অনুসারে, ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৬১) কারবালার যুদ্ধে ভারতের এক হিন্দু সারস্বত ব্রাহ্মণ রিহাব সিধ দত নিজে যুদ্ধ করেন এবং তার সাত পুত্রসহ শাহাদাত বরণ করেন ইমাম হুসাইনের পক্ষে। সেই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজও এই সম্প্রদায় পালন করে আশুরা।
ইতিহাস, সাহিত্য আর বিশ্বাসের মিলন
বাংলা সাহিত্যে কারবালার ট্র্যাজেডিকে অমর করে রেখেছেন মীর মশাররফ হোসেন তার কালজয়ী উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু-তে। যদিও সেখানে রিহাব সিধ দতের নাম উল্লেখ নেই, তবু উপমহাদেশে বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, তাদের পূর্বপুরুষরাই ছিলেন সেই ব্রাহ্মণ বীর।
ধর্মীয় সম্প্রীতির এক দুর্লভ দৃষ্টান্ত
হুসাইনি ব্রাহ্মণদের জীবনধারায় দেখা মেলে এক অসাধারণ মিলন—হিন্দু ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা আর শিয়া ইসলামের রীতি-নীতি একসঙ্গে পালন করেন তারা। ইমাম হুসাইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে তারা আশুরা উপলক্ষে শোক মিছিল, তাজিয়া এবং মজলিসের মতো আচারও পালন করে থাকেন।
এই সম্প্রদায় সংখ্যায় কম হলেও ধর্মীয় সম্প্রীতি আর ঐতিহাসিক চেতনায় তারা এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
দুই ধর্মের সেতুবন্ধন
আজকের বৈচিত্র্যময় ও ধর্মবৈচিত্র্যে পূর্ণ সমাজে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা যেন এক অনন্য উদাহরণ—যেখানে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আর ঐতিহ্যের বন্ধনে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!