ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে শিক্ষা ও দ্বীনি দাওয়াত ছিল মুসলিম রাষ্ট্রের প্রাণ। রসুলুল্লাহ ﷺ- এর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদিন শিক্ষা ও দ্বীন প্রচারকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
বিস্তারিত:
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—ইসলামের সূচনালগ্নে শিক্ষা মানেই ছিল আত্মশুদ্ধি ও আমলের আহ্বান। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর খোলাফায়ে রাশেদিন—হজরত আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.) ও আলি (রা.)—রাষ্ট্রের প্রতিটি পর্যায়ে কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক শিক্ষা ও দ্বীন প্রচারকে অগ্রাধিকার দেন। তাদের দৃষ্টিতে শিক্ষা শুধু তথ্য নয়; বরং আল্লাহভীতি, নৈতিকতা, জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়।
সে যুগে প্রতিটি মসজিদ ছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, প্রতিটি আলেম ছিলেন সমাজের পথপ্রদর্শক, আর প্রতিটি শিক্ষার্থী ছিল দ্বীনের প্রতিনিধি। খলিফাগণ শিক্ষাব্যবস্থার মূল উৎস হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকেই মানতেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।”
(সুরা তাহা: ১১৪)
আর নবীজি ﷺ বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।”
(সহিহ বুখারি: ৫০২৭)
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শিক্ষা তত্ত্বাবধান:
হজরত উমর (রা.) রাষ্ট্রের প্রতিটি অঞ্চলে শিক্ষক নিয়োগ দেন, যেন প্রতিটি শিশু কুরআন, আরবি ভাষা ও ইসলামি চরিত্রে শিক্ষিত হয়। তিনি বলতেন—“যে জাতির সন্তানদের মাঝে কুরআনের আলো জ্বলে না, তারা কখনোই টিকে থাকতে পারে না।” (আল-বালাজুরি, ফুতুহুল বুলদান, ১/৪৮৬)
দ্বীন প্রচারের বিশ্বব্যাপী অগ্রযাত্রা:
সাহাবায়ে কেরাম শুধু ইসলাম প্রচার করেননি, তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। ইরাক, সিরিয়া, মিশর ও পারস্যের মাটিতে গড়ে ওঠে কুরআনের মক্তব ও মাদরাসা। এভাবেই শিক্ষা হয়ে ওঠে দ্বীন প্রচারের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
আল্লাহ বলেন,
“তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।”
(সুরা নাহল: ১২৫)
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা: এক হৃদয়বিদারক বাস্তবতা
আজকের বাংলাদেশে ইসলামি মূল্যবোধ ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কুরআন শিক্ষা ঐচ্ছিক হওয়ায় শিশুরা হারাচ্ছে নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি। নবীজির প্রেম ও সাহাবাদের ত্যাগের গল্পের পরিবর্তে তাদের মনে জায়গা নিচ্ছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও অশালীন বিনোদন।
ভয়াবহ পরিণতি:
১️⃣ ইসলাম ও আখিরাত সম্পর্কে অজ্ঞ প্রজন্মের উত্থান
২️⃣ পরিবারে শ্রদ্ধা ও নৈতিকতার ঘাটতি
৩️⃣ সমাজে মিথ্যা, প্রতারণা ও অসভ্যতার বিস্তার
আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন,
“তাদের পর এমন এক দল এল যারা নামাজ ত্যাগ করল এবং প্রবৃত্তির অনুসারী হলো।”
(সুরা মারইয়াম: ৫৯)
করণীয়:
১️⃣ রাষ্ট্রীয়ভাবে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা
২️⃣ প্রাথমিক স্তরে ইসলামি ইতিহাস ও নবীজির জীবন অন্তর্ভুক্ত করা
৩️⃣ শিক্ষকদের জন্য দ্বীনি প্রশিক্ষণ চালু করা
৪️⃣ গণমাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধ প্রচার
৫️⃣ অভিভাবকদের ঘরে দ্বীনি পরিবেশ তৈরি করা
খোলাফায়ে রাশেদিন যুগে শিক্ষা ছিল আল্লাহভীতি, ন্যায় ও মানবিকতার প্রতীক। আজ সেই আদর্শে ফিরে না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আত্মিক অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আমাদের প্রয়োজন এমন শিক্ষা, যেখানে শিশুরা শিখবে কেবল অক্ষর নয়, বরং আখলাক ও আল্লাহভীতি।
“তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাদের স্মরণ করবেন।”
(সুরা বাকারা: ১৫২)
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!