মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি ঘিরে ফের বড় ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তদন্তে স্ববিরোধী অবস্থান নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একই ঘটনায় একদিকে সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডি, আবার অন্যদিকে বেনামী অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন করে ৩৩ জন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেছে।
২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মানবপাচার ও অর্থপাচারের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। মামলার আসামিরা এসব অভিযোগকে ‘অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন। মালয়েশিয়ান সরকারও বাংলাদেশকে এসব ‘অপ্রমাণিত ও হয়রানিমূলক’ অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
কিন্তু সিআইডির পরস্পরবিরোধী তদন্ত প্রক্রিয়ায় দেশের ভেতর ও বাইরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থার কারণে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী প্রায় ১২ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চয়তায় পড়েছে। অথচ আগামী ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১২ লাখ শ্রমিক নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বোয়েসেলও পাঠাতে পারেনি শ্রমিক
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওভারসীস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) ২০২৪ সালে নিয়োগ অনুমতি পাওয়া ৭,৮৬৯ জন শ্রমিককে মালয়েশিয়া পাঠানোর দায়িত্ব পেয়েছিল। ১ জুলাই থেকে তাদের পাঠানোর কথা থাকলেও আড়াই মাসেও একজনকেও পাঠানো যায়নি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই শ্রমিকদের পাঠানো বাধ্যতামূলক হলেও বোয়েসেল সম্প্রতি শ্রমিক প্রতি ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের সার্কুলার জারি করেছে।
এতে প্রশ্ন উঠেছে—যখন বেসরকারি এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে একই কারণে মামলা হয়েছে, তখন সরকারি সংস্থা কীভাবে নতুন করে টাকা আদায় করছে? ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, বোয়েসেলের সঙ্গে থাকা একটি দালালচক্র এর সুযোগে শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।
তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন
বনানী থানায় দায়ের করা মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তে সিআইডি ‘সাক্ষীর জবানবন্দি’ নামে একই ধরনের ফরম তৈরি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিআইডির এক ডিআইজি নিজেই স্বীকার করেছেন, এটি সাক্ষ্য আইনের পরিপন্থী এবং আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ—অটো অ্যালোকেশন পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে কোটা বণ্টন হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় বা সিন্ডিকেট করার সুযোগই ছিল না। এজেন্সিগুলো সরকার নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ নিয়েই শ্রমিক পাঠিয়েছে এবং শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছে। অথচ প্রতিযোগী ব্যবসায়ীদের চাপ ও বেনামী অভিযোগের কারণে অযথাই মামলা হচ্ছে।
অর্থনীতির ওপর প্রভাব
বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুলাংশে প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যদি স্বীকৃত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে হয়রানি করা হয়, শ্রমিক পাঠানো বাধাগ্রস্ত হবে এবং দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের উচিত দ্রুত বাজার খোলা।”
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!