২০২৪ সালের ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর এক বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এক বছরের মাথায় এই সরকারের ১২টি প্রধান অর্জনের কথা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই ১২টি সাফল্যের তালিকা প্রকাশ করেন তিনি। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো—
১. দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফিরেছে
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। প্রতিশোধ ও বিশৃঙ্খলার বদলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে এনেছে বর্তমান নেতৃত্ব।
২. অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ
খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রেমিট্যান্স ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা রেকর্ড। রপ্তানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং টাকার মান ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাংকিং খাতেও স্থিতিশীলতা এসেছে।
৩. বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা সফলভাবে শেষ হয়েছে। হান্ডা গ্রুপের মতো বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা ২৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) দ্বিগুণ হয়েছে।
৪. রাজনৈতিক সংস্কার ও ঐতিহাসিক ‘জুলাই সনদ’
৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে ‘জুলাই সনদ’ গৃহীত হয়েছে। এতে ভবিষ্যতের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে।
৫. জুলাই গণহত্যার বিচার
মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি বড় ট্রায়াল শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
৬. স্বচ্ছ নির্বাচনের রোডম্যাপ
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী ও নারী ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনকে উৎসবে পরিণত করতে নেওয়া হয়েছে ডিজিটাল পরামর্শ প্ল্যাটফর্ম।
৭. আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
বিচার বিভাগ: সংস্কার-ভিত্তিক নিয়োগ
পুলিশ: মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ
আইন: ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে গ্রেপ্তারের তথ্য, চিকিৎসা অধিকার, অনলাইন জিডি বাধ্যতামূলক
৮. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার, ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা—এসবই প্রমাণ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে সরকার।
৯. ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইইউসহ নানা দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে বহুমুখী কূটনীতি গড়ে তুলেছে সরকার। সার্ক ও আসিয়ানে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।
১০. প্রবাসী অধিকার ও শ্রম বাজার
ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ এবং ইউএই ও মালয়েশিয়ার ভিসা সহজীকরণ প্রবাসীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
১১. যোদ্ধাদের জন্য সহায়তা
৭৭৫ জন শহীদের পরিবারকে ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র এবং ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত যোদ্ধাকে ১৫৩ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহতদের বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১২. সামুদ্রিক সম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়ন
বঙ্গোপসাগরকে জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ঘোষণা, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং গভীর সমুদ্র প্রকল্পে বৈশ্বিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেস সচিবের মতে, এক বছরের মধ্যে এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে একটি ভেঙে পড়া পরিস্থিতি থেকে পুনর্গঠনের পথে ফিরিয়ে এনেছে। শান্তি, উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে এই ১২টি অগ্রগতি আগামীর পথচলার ভিত্তি তৈরি করছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!