যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ঘোষিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর পেছনে বড় কারণ—যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্ন খাতে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। এই ছাড়ের আওতায় রয়েছে শুল্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আমদানি, মেধাসম্পদ, শ্রম অধিকার, পরিবেশসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এখন উভয় দেশ ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পারস্পরিক বাণিজ্যচুক্তি’ নামে একটি চুক্তির দিকে এগোচ্ছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে কিছু আইন ও নীতিমালায় পরিবর্তন আনার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের সব দাবি আমরা মানিনি। লম্বা সময় ধরে দর-কষাকষির পর যৌক্তিক বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।”
বাংলাদেশ কী কী ছাড় দিচ্ছে?
শুল্ক ছাড়: যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর কাস্টমস ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানো হবে, তবে এজন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে।
বিনিয়োগে ছাড়: যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ওপর থাকা কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য অনাপত্তিপত্র (NOC) পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে।
বকেয়া পরিশোধ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া: দেশে থাকা মার্কিন কোম্পানির পাওনা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়া হবে স্বচ্ছ ও দ্রুত।
নতুন আমদানির খাত: সামরিক পণ্য, বেসামরিক উড়োজাহাজ, এলএনজি, গম, তুলা, খাদ্য ও ভোজ্যতেলসহ বেশ কিছু খাত থেকে আমদানি বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ও বাংলাদেশে প্রতিফলন
অবৈধ রপ্তানি ঠেকাতে যৌথ তদন্তে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।
আমদানি লাইসেন্সিং প্রতিবেদন ডব্লিউটিওতে জমা দেবে।
FDA অনুমোদিত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি গ্রহণ করবে।
মার্কিন দুগ্ধজাত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
উদ্ভিদজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ১৮ মাসের মধ্যে অনুমোদন দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আইনি প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশ বার্ন কনভেনশন, মারাকেশ চুক্তি, মাদ্রিদ প্রটোকলসহ অন্তত ১২টি আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতিবিরোধী ও বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রকাশ, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় মার্কিন মতামত বিবেচনা, সাইবার আইন সংশোধন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং ওটিটি আইন বাতিল বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
পুনর্বিমার শর্তে পরিবর্তন
বর্তমানে বিমা করপোরেশনের মাধ্যমে ৫০% পুনর্বিমার বাধ্যবাধকতা বাতিলের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!