ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী জাহাজ কনশানস-এ থাকা দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম জানালেন, জাহাজটি দীর্ঘ ভ্রমণের উপযোগী নয়; খাদ্য, পানি ও ঘুমের সীমাবদ্ধতা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ও রুট-বিকল্প—all কিছুতে কঠোর পারিশ্রমিক চলছে এবং দিনভর কার্যক্রম জটিল।

ফ্রিডম ফ্লোটিলার অংশ হিসেবে কনশানসে থাকা শহিদুল আলম রোববার (৫ অক্টোবর) তাঁর সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা লিখিতভাবে বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি কীভাবে কাজ করা হচ্ছে, জীবন-যাপন কেমন এবং কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে—সবই তুলে ধরেছেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী মূল বিষয়গুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
কনশানস একটি পুরোনো জাহাজ (১৯৭২ সালে নির্মিত) এবং দীর্ঘ দূর ভ্রমণের জন্য তৈরি নয়। ফলে যাত্রীদের জন্য কেবিন নেই; কেবিনগুলো কেবল ক্রুদের জন্য সংরক্ষিত। বাকিরা মেঝেতে স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাচ্ছেন। প্রতিজন সর্বোচ্চ ১০ কেজি করে জিনিস আনতে পেরেছেন।
বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব রয়েছে; তাই প্রত্যেকে পানি খুব হিসাব করে ব্যবহার করছেন। জাহাজে কেউ গোসল করতে পারছেন না।
ক্রুদের মধ্যে সার্ভিস স্টাফ না থাকার কারণে জাহাজের অভ্যন্তরীণ কাজ—শৌচাগার পরিষ্কার, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, রান্নাঘর পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি—নিজেদের মধ্যেই করতে হচ্ছে।
অতিরিক্ত নিরাপত্তা বজায় রাখতে ড্রোন নজরদারি ও কড়াকড়ি বিধি-নিয়ম রয়েছে। যারা আছেন (সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মী), তারা জাহাজের কার্যক্রম বা হামলার পরিস্থিতি পরিচালনায় পূর্বানূভূত নয়; তাই লাইফজ্যাকেট ব্যবহার, সরার রুট ইত্যাদি নিয়ে নিয়মিত নিরাপত্তা মহড়া চলছে।
সমুদ্র উত্তাল হলে অসুস্থতা ও যাতায়াত জটিল হয়ে পড়ে। চিকিৎসাকর্মীদের তৎপরতা প্রশংসনীয় হলেও অসুস্থদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া সবসময় সহজ নয়।
সাংবাদিকদের কাজ—ছবি, ভিডিও, নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কথা বলা—অনিশ্চয়তার মধ্যেও চালাতে হচ্ছে, যা অনেক সময় কঠিন।
স্থলভাগের কারিগরি, আইনগত ও মিডিয়া টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ফ্লোটিলার অন্যান্য জাহাজ ও ফিলিস্তিনি সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলানো—সবকিছুই নিয়মিত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে রুট বদলাতে হচ্ছে (কিছু ছোট জাহাজে ইঞ্জিন সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভ্রমণ বাতিল হয়েছে)।
শহিদুল আলম ব্যক্তিগত আপডেট চাওয়ার অনুরোধকে বিনীতভাবে অসম্ভব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অনুরোধ করেছেন, ব্যক্তিগত বার্তার বদলে যাত্রার উদ্দেশ্যকে সহযোগিতা ও জনসমর্থন দিন—সড়কে নামুন, ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করুন বা আপনার নেতাদের জবাবদিহি দাবি করুন—কারণ এই উদ্যোগটি গাজার মানুষের জন্য বলে তিনি বার্তা দিয়েছেন।
শহিদুল আলম প্রকাশিত বিবরণে গাজার হাসপাতালে হামলার বর্ণনা শুনে জাহাজে থাকা চিকিৎসক কান্নাভেজা হয়ে পড়েন; এটি শহিদুলের কাছে মিশনের তাত্ত্বিক ও নৈতিক জরুরিতার একটি শক্তিশালী স্বীকৃতি হিসেবে এসেছে। তিনি শেষ করেন—“আমরা সবাই এখন ফিলিস্তিনি।”
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!